বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি টেকনাফে মাছ কিনতে আসা অপহৃত সেই ২ রোহিঙ্গা উদ্ধার; গ্রেপ্তার ৩ (আপডেট সহ) টেকনাফে মাছ কিনতে আসা অপহৃত সেই ২ রোহিঙ্গা উদ্ধার; আটক ১ পাচারকারির ফেলা ব্যাগে মিলেছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ইয়াবা নাফনদী থেকে ৫০ হাজার ইয়াবা সহ রোহিঙ্গা আটক টেকনাফে দিনদুপুরে দুই মৎস্য ব্যবসায়িকে অপহরণ সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজের ১৫ ঘন্টার পর দুই শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার টেকনাফ সৈকতে গোসলে নেমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ ২ বুদ্ধাঙ্ক (IQ) এর পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিভাবান শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক মাত্রা চকরিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে পেকুয়ার ৩ যুবক : ফিরলেন মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত

এম জাহেদ চৌধুরী : পেকুয়ার মো. হানিফ (২১)। ২০২১ সালে এইচএসসি পাশ করে উন্নত জীবন ও পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে স্বপ্ন দেখে বিদেশ যাওয়ার। স্বপ্ন পূরণ করতে ২০২৩ সালে লিবিয়া যাওয়ার প্রলোভনে মানবপাচারের খপ্পরে পড়ে আট লাখ টাকা খুইয়ে কৌশলে জীবন নিয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরে আসে। এসে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন পেকুয়ার হানিফ। চক্রের মূল হোতা মোঃ রিদুয়ান ও তার মা হাছিনা বেগমের নামে প্রতারণার দায়ে চকরিয়া বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কোর্ট ইন্সপেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় হানিফের সাথে লিবিয়া যাওয়ার খপ্পরে পড়েছে রাশেদুল ইসলাম ও সাঈদী নামের আরও ২ জন।

মামলা সূত্রে ও হানিফের সাথে কথা বলে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনার কালা মিয়ার ছেলে মোঃ রিদুয়ান ও তার ভাই মোঃ ইরফান লিবিয়ায় লোক পাঠিয়ে থাকেন। উন্নত জীবন ও পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় রাজাখালীর বদিউদ্দিন পাড়ার মোঃ ইউনুছের ছেলে মোঃ হানিফ মোঃ রিদুয়ানের সাথে যোগাযোগ করলে রিদুয়ান সাড়ে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে তাঁকে দুবাই হয়ে লিবিয়া নেওয়ার আশ্বাস দেন। হানিফকে ৬০ হাজার টাকা বেতনের ক্যান্টনমেন্ট এর ভিতরে চাকুরীর প্রলোভন দেখান রিদুয়ান। রিদুয়ানের দেওয়া প্রতিশ্রæতি মতে হানিফ লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সাথে লিবিয়া যাওয়ার জন্য একই ইউনিয়নের মোঃ শরীফের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ও শাহ আলমের ছেলে সাঈদী আগ্রহী হন। তাদের চুক্তিমতে অগ্রিম ১ লাখ দিতে হবে। বাকী ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লিবিয়া পৌঁছে পরিশোধ করতে হবে। কথামতে তাঁরা টাকা পরিশোধ করেন। গত ৮ জুন বিমানযোগে তাঁদেরকে দুবাই নিয়ে যায়। সেখান থেকে ৮ দিন পর বিমানযোগে লিবিয়া নিয়ে যান।

মানবপাচারকারী খপ্পর থেকে জীবন নিয়ে ফিরে আসা মো. হানিফ জানায়, দুবাই বিমানবন্দর থেকে রিদুয়ানের পিতা কালা মিয়া তাঁদেরকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে যান। দুবাইতে ২ দিন অবস্থান করার কথা থাকলেও ৮ দিন পর লিবিয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে তুলে দেন তাঁদের। লিবিয়া পৌঁছালে বিমানবন্দর থেকে রিদুয়ানের ভাই ইরফান তাঁদেরকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে যায়। চুক্তিমতে লিবিয়া পৌঁছে ২ দিন পর চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। চাকরি না দিয়ে ২১ দিন বাসায় আটকে রেখে পরে দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরই মাঝে ২১ দিন যাবত ঠিকমতো খাবার দেয়নি। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করেছে।

তিনি বলেন, নতুন দালাল চক্র আমাদেরকে একটি ক্যাম্পে ১২ দিন আটকে রাখে। সেখানে আমাদের উপর শারিরীক নির্যাতন চালায়। আমার কপালে,পিঠে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারা আমাকে ছুরি দিয়ে গায়ে আঘাত করেছে। ১২ দিন পর আমাদের মাধ্যমে পরিবারে ফোন দিয়ে জনপ্রতি ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করে। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা না দিলে আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। যখন ফোন করছিলাম তখনও আমাদেরকে মারছিল তারা। ওই ক্যাম্পে ১০০ জনেরও বেশী লোক ছিল।

তিনি আরও বলেন, র্নিদিষ্ট সময়ে পরিবার থেকে মুক্তিপন দিতে রাজি হওয়ায় আমরা প্রাণে রক্ষা পাই। কিন্তু তারা ব্যাংকে টাকা নিতে রাজি নয়। দেশেও তাদের চক্রের প্রতিনিধি রয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন নম্বরে জনপ্রতি ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা করে নিয়ে আমাদেরকে একটা অপরিচিত জায়গায় ছেড়ে দেয়। সেখানে জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সাথে দেখা হয়। তার বাসায় আশ্রয় নিয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যাংকের মাধ্যমে বিমান ভাড়ার টাকা নিয়ে গত ১৪ আগষ্ট দেশে ফিরে আসি।

হানিফ বলেন, দেশে এসে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে বিচার দিই। মানবপাচারের মূল হোতা মো. রিদুয়ান বিচারের তোয়াক্কা না করে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেয়। এমনকি সবকিছু অস্বীকার করে ভবিষ্যতে টাকা চাইলে মারধর করারও হুমকি দেয় রিদুয়ান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নরুল আবছার জানান, রিদুয়ান ও ইরফান বেশী বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়াতে মানুষ নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। তাদের এই খপ্পরে পড়ে হানিফ,রাশেদ ও সাঈদী। তাদের এই খপ্পরে পড়ে পরিবারগুলো সবকিছু হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছে।

স্থানীয়রা বলেন, রিদুয়ান, ইরফান ও তার বাবা মানবপাচার চক্রের সদস্য। তাদের খপ্পরে পড়ে লিবিয়া গিয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। আর কোন পরিবার যাতে তাদের ফাঁদে না পড়ে তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে এই মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রিদুয়ানের মা হাছিনা বেগম বলেন, হানিফের সাথে রিদুয়ানের লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। চুক্তিমতে তাদেরকে লিবিয়ায়ও পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে গিয়ে কি ঘটেছে আমি কিছুই জানি না।

এ ব্যাপারে হানিফের পিতা মোহাম্মদ ইউনুছ(৪৮) ও সাঈদীর পিতা শাহ আলম বাদী হয়ে চকরিয়া বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে রিদুয়ান ও তার মা হাছিনা বেগমকে বিবাদী করে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888